এইদিকে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারী চৌরাস্তার একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়! নগদ ৩ লক্ষ এবং গয়না নিয়ে ৫ সদস্যর এক দল বাসায় ডাকাতি করে।
এ সময় খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাত দিয়ে জানানো গেছে থানায় ৭০৭ ধারায় ডাকাতি মামলার কাগজ র্যাব -৩ এর কার্যালয়ে হস্তানতর করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুর বাংলাবাজার নৌপথে গত কয়েক দিন ঈদে ঘরমুখী মানুষের ঢল ছিল। তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘাটের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ নেই। যাত্রীরা আসার পরপরই ফেরিতে উঠতে পারছেন।
ফেরিতে উঠতে পেরে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন কয়েকজন যাত্রীও। রাইসুল ইসলাম নামের পটুয়াখালীগামী এক যাত্রী বলেন, ‘চিন্তাও করিনি ঘাটে এসে সরাসরি ফেরিতে উঠতে পারব। ফেরিতে উঠতে পেরে কী যে আনন্দ লাগছে, সেটা ভাষায় বলা যাবে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘাটের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আজ বাদে কাল ঈদ। কোনো যাত্রীর যেন ভোগান্তি না হয়, তাই ঘাট দিয়ে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে।
শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো.হিলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, গত কয়েক দিন এই ঘাটে যাত্রীদের মারাত্মক ভিড় থাকলেও আজকে অনেকটাই স্বাভাবিক। ঘাটে যাত্রীদের কোনো চাপ নেই। তাঁরা আসার পরই ফেরিতে উঠতে পারছেন। তিনি আরও বলেন, ঈদের আগের দিন ঘাটে যেমন চাপ থাকার কথা, তেমনটা নেই। ঘাটের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
জুবাইদা বেগম নামে এক যাত্রী বলেন, তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। ঈদের ছুটি পেয়েছেন। দুদিন আগেও তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না কীভাবে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। মা–বাবার সঙ্গে ঈদ করবেন। আজকে সকালে তিনি ঘাটে চলে এসেছেন। সৌভাগ্যবশত ফেরিতে জায়গা পেয়েছেন। এতে বেজায় খুশি তিনি।
একইভাবে উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন বরিশালগামী যাত্রী রুবেল, খুলনার তৈয়ব আলী, জাহানারা বেগমেরা। তবে যাত্রীরা বলেন, ছোট গাড়িতে ঘাটে আসতে তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার যান চালু থাকলে সুবিধা হতো বলে জানান তাঁরা।
কয়েক দিন ধরে শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে ঈদের ছুটিতে দক্ষিণবঙ্গগামী জেলার মানুষ বাড়ির দিকে ছুটছেন। যখনই একটি ফেরি ঘাটে ভিড়েছে, তাতে হুমড়ি খেয়ে যাত্রীরা উঠেছেন। শিমুলিয়া ঘাটের যাত্রীদের চাপে বাংলাবাজার ঘাট থেকে আসা যাত্রীরা ফেরি থেকেও নামতে পারেননি। সে তুলনায় আজ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সচেতনতা দেখা যায়নি।
সময়মতো ঋণ না পেয়ে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে অস্ত্রের মুখে বনানীর বাসায় ধরে এনে নির্যাতন চালিয়েছে সিকদার গ্রুপ। ব্যাংকটির এমডিকে উদ্দেশ করে গুলিও ছোড়েন সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার। হায়দার আলী মিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যানও। আর এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা করেছে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। একাধিক সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের এমডি পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
প্রথম আলো: একজন এমডিকে গুলি করা হয়েছে। বাসায় ধরে এনে নির্যাতন চালানো হয়েছে। শুনেছেন বিষয়টা?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: হ্যাঁ, শুনেছি। এ ঘটনা জানার পর আমার মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে, আইন কি আমাদের শাসন করছে, নাকি কয়েকটি ধনী গ্রুপ আমাদের শাসন করছে। ব্যাংকারদের নিয়ে আমরা আগ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন শুনে আসছি। তাঁরা চাপে আছেন, আবার কেউ কেউ ঘুষ নিয়ে কাজ করছেন। এখন যেটা জানা গেল, সেই চাপটা ভয়ংকর। একজন এমডিকে ডেকে নিয়ে গুলি করা, বাসায় নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো সাংঘাতিক ব্যাপার। এমডিকে গুলি করার ঘটনা চিন্তাও করা যায় না। এ কাজটা করল সরকার ঘনিষ্ট একটা ধনী গ্রুপ, যাদেরও একটি ব্যাংক রয়েছে। এরা অনেক ক্ষমতাবান, অনৈতিক ক্ষমতাবান।
প্রথম আলো: পুরো বিষয়টি জেনে কী মনে হচ্ছে, এভাবে কি চলতে থাকবে, নাকি এটাই শেষ?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: ঘটনা ঘটার ১২ দিন পর মামলা হয়েছে। এর কারণ হলো, এক্সিম ব্যাংকের মালিকেরাও ধনিক গোষ্ঠী। এক ধনিক গোষ্ঠী গুলি করেছে, আরেক গোষ্ঠী তাদের রক্ষা করতে চেয়েছে। এ জন্য মামলা করতে বিলম্ব করেছে। আমাদের সন্দেহ হয়, এই মামলা কি কখনো আলোর মুখ দেখবে। যেমনভাবে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই ধোরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন, এরাও একইভাবে পাড় পেয়ে যাবে কি না। এটা কেমন শাসন! এই অপশাসন থেকে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরে যেতে চাই। তাহলেই সব সমাধান হবে। আর যে পরিস্থিতি চলছে, এমন ঘটনা এখনই বন্ধ হবে না। এটা আমরা জানতে পেরেছি, অনেক ঘটনা অগোচরেই থেকে যাচ্ছে।
প্রথম আলো: ব্যাংকাররা চাপে পড়লে কী সমস্যা? এতে কি গ্রাহকদের কোনো দুশ্চিন্তা আছে?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: ব্যাংকাররা এভাবে চাপে পড়লে জনগণের আমানত অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। চাপে পড়ে ঝুঁকি বিবেচনা না করে ঋণ দেবে, যা আদায় হবে না। ফলে জনগণের আমানত খেয়ানত হয়ে যাবে। এমনিতে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণে জর্জরিত। আর এসব ঋণই তো খেলাপি হয়ে পড়ে, এ কারণে ব্যাংকটি স্বেচ্ছায় এ ঋণ দিতে চায়নি।
প্রথম আলো: এ অবস্থায় আপনার চাওয়া কী? এর সমাধান কীভাবে হবে?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: সরকারের উচিত মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা। কারা অপরাধ করল, তা বিবেচনা না করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সরকারের কাছে অনুরোধ করতে পারে। কারণ, এটা ব্যাংকের এমডিদের অস্তিত্বের বিষয়। তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন কি না, তার পরীক্ষা।
প্রথম আলো: এ ঘটনাার অন্য ব্যাংকারদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হবে? অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী হতে পারে?
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: এর ফলে সব ব্যাংকারই আতঙ্কে ভুগবেন। প্রতিনিয়ত গুলি খাওয়ার আতঙ্কে ভুগবেন ঋণ কর্মকর্তারা। ব্যাংক খাত এমনিতেই খারাপ অবস্থায়, এর মাধ্যেম খাতটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকাররা হয় গুলি খাবেন, না হলে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে হবে। এখন রাজনৈতিক সরকারই পারে এ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে। আমরা এখনো সে আশায় বসে আছি। নিশ্চয়ই একদিন সুদিন আসবে।
আরও পড়ুন:
‘গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দিব’
এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে গুলি, আটকে রেখে নির্যাতন
Also Read
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকেও তৈমুরকে প্রত্যাহার
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নতুন বছর কতটা ফুরফুরে ও চিন্তামুক্ত হতে চলেছে, মাস তিনেকের মধ্যেই তা বোঝা যাবে। আপাতত দেখা যাচ্ছে, কিছুটা ফিকে হয়ে আসা তাঁর বলিরেখা বছর শুরুর মুখে ফের গাঢ় হয়েছে।
এর বড় কারণ কোভিডের তৃতীয় ঢেউ। অজানা অমিক্রনের সঙ্গে পরিচিত ডেলটার ঝাপটা অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, সে ইঙ্গিত অন্যদের মতো তাঁর কাছেও নেই। দ্বিতীয় কারণ, উত্তর প্রদেশ। বৃহত্তম এই রাজ্যের বিধানসভার ভোট তাঁর জন্য কোন বার্তা বয়ে আনতে চলেছে, তা এখনো অনিশ্চিত। ভোট পণ্ডিতেরা তো বটেই, জনমত সমীক্ষাকারীদের পাশাপাশি শারদ পাওয়ারের মতো পোড় খাওয়া দুঁদে রাজনৈতিক নেতাও মনে করছেন, উত্তর প্রদেশে এবার বিজেপির চান্স ‘ফিফটি-ফিফটি’।
বিজ্ঞাপন
কোভিডের দরুন দুই বছর ধরে ভারতের অর্থনীতি চলেছে ঢিমেতালে। মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, গোঁত্তা খাওয়া ঘুড়ির মতো কর্মসংস্থানের হাল ও বেকারত্বের ঊর্ধ্বগামিতায় অর্থনীতির ঋণাত্মক বৃদ্ধির হাহাকার দেশবাসীকে কুরে কুরে খেয়েছে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি অর্থনীতির আকাশে রুপালি কিছু ঝিলিক দেখা দিয়েছিল। অবসাদ কাটিয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি সামান্য হলেও ইতিবাচক হয়েছিল। কিন্তু অমিক্রনকে দোসর করে কোভিডের ফিরে আসা ও পুরোনো নিষেধাজ্ঞাগুলোর প্রত্যাবর্তনের আশঙ্কা সামান্য সেই বৃদ্ধিও ধরে রাখতে পারবে কি না, সংশয় জাগিয়েছে।
চিন্তাকে দুশ্চিন্তায় পর্যবসিত করেছে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি। দেশের সর্বত্র পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের ওপর। পেট্রল-ডিজেলের নিত্য মূল্যবৃদ্ধির ঝাপটায় সাধারণ মানুষ তিক্তবিরক্ত। কোভিডের মোকাবিলায় সরকারের প্রাথমিক ব্যর্থতার পাশাপাশি অর্থনীতির তলানিতে পৌঁছানো এবং মূল্যবৃদ্ধিজনিত সার্বিক অসহায়তা মোদি সরকারের ভাবমূর্তিতে যে আঘাত হানে, তা থেকে পরিত্রাণ পেতে শেষ পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারগুলো জ্বালানির ওপর ভ্যাট কমাতে বাধ্য হয়। বস্তুত সেটা ছিল অ-বিজেপি রাজ্য সরকারের ওপর বিজেপির রাজনৈতিক চাপ। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। যে সময় মনে করা হচ্ছিল অর্থনীতির ফাড়াটা কাটতে চলেছে, সে সময়ই মূর্তিমান বিপদ
বিজ্ঞাপন
সেজে অমিক্রনকে দোসর করে উপস্থিত কোভিডের তৃতীয় ঢেউ। অর্থনীতিকে তা ফের কোন চুলায় নিয়ে যাবে, এখনই সেই অনুমান সম্ভবপর নয়। আপাতত ত্রাহি ত্রাহি রব চারদিকে।
এর ঠিক আগের পরিস্থিতিও সরকারের পক্ষে বিশেষ স্বস্তিজনক ছিল না। গত জুলাইয়ে কিছুটা বাড়া কর্মসংস্থানের লেখচিত্র আগস্ট মাসে আচমকাই নিম্নগামী হয়। ১ মাসে ১৫ লাখ কর্মী বেকার হয়ে যান। ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’র রিপোর্ট অনুযায়ী জুলাইয়ে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৯৯ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন। আগস্ট মাসে কর্মহীন হন ১৫ লাখ! শহুরে বেকারত্বের হার বাড়ে দেড় শতাংশ, গ্রামীণ হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ, সারা দেশের হার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ! অথচ আগস্টে সেই হার ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। সারা দেশে ৪ কোটি মানুষ তখন চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন। অবস্থার উন্নতি যখন হচ্ছিল, নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় অর্থনীতিতে যখন গতি আসছিল, তখনই কোভিডের তৃতীয় হুংকারের নতুন আতঙ্ক। প্রধানমন্ত্রী মোদির চিন্তা তো বাড়বেই।